ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গত বছর ৩১ থেকে ৫১ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো জনবল কাঠামো দিয়েই এর কাজ চলছে। একে তো পর্যাপ্ত চিকিত্সক নেই, তার ওপর কর্মরত চিকিত্সকেরা নিয়মিত কর্মস্থলে না আসায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুচিকিত্সা না পেয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সাসেবার মান নিয়ে তাই এলাকাবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জন চিকিত্সক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এখানে ১০ জন আছেন। এক বছর ধরে জরুরি প্রসূতি বিভাগের জন্য মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজনকে প্রেষণে ও উপজেলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন চিকিত্সককে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে দুজন চিকিত্সা কর্মকর্তাসহ শিশু, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের কনিষ্ঠ পরামর্শকের (জুনিয়র কনসালট্যান্ট) পদ শূন্য রয়েছে। ১৫ জন নার্সের মধ্যে ছয়জনের পদও শূন্য রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সদস্য কামরুল হাসান জানান, হাসপাতালটির চিকিত্সার মান নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে ২৭ আগস্ট চিকিত্সকদের উপস্থিতির চিত্র থেকে। সেদিন ১২ জন চিকিত্সকের মধ্যে একজনের ছিল সাপ্তাহিক ছুটি, দুজন ছুটিতে, আর পাঁচজন ছিলেন অনুপস্থিত।
জানা গেছে, সেদিন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুর রহমান তাঁর অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিত্সক না পেয়ে এবং রোগীদের দুর্ভোগ দেখে ভালুকা আসনের সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এম আমান উল্লাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। সাংসদ তাত্ক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহজাহান অনুপস্থিত পাঁচ চিকিত্সক—মুসফিক আহাম্মেদ চৌধূরী, শফিউল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, কুহু মোত্সুদ্দী ও ফিরোজ হায়াত খানকে এ ব্যাপারে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেন। সবাই নোটিশের জবাব দিয়েছেন।
গত শনিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহজাহান ছুুটিতে আছেন। তিন মাস খালি থাকার পর জরুরি প্রসূতি বিভাগের একমাত্র চিকিত্সক শাহিদা আক্তার ১২ আগস্ট যোগদানের পর থেকেই অসুস্থতাজনিত ছুটিতে আছেন। কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়ার পরও মুসফিক আহাম্মেদ চৌধূরী, ফিরোজ হায়াত খান হাসপাতালে অনুপস্থিত। চিকিত্সক আহাম্মেদ ফয়সাল হাসান ও আতাউল গনি ওসমানী অনুমতি না নিয়েই শনিবার কর্মস্থলে আসেননি।
হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের রোগী ধামসুর গ্রামের ললিতা রানী (২৫) বলেন, ‘এখানে এসে শুনেছি ডাক্তার নেই। তাই কোনো ক্লিনিকে গিয়ে চিকিত্সা নেওয়ার কথা ভাবছি।’
বহির্বিভাগের রোগী সাতেঙ্গা গ্রামের জেসমিন আক্তার (৩০) বলেন, ‘এখানকার চিকিত্সকের পরামর্শে বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে এনেছি।’
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স জরিনা আক্তার খানম জানান, প্রতি মাসে ১০-১২টি সিজার হলেও চিকিত্সক না থাকায় গত আগস্ট মাসে এখানে একটি সিজারও হয়নি।
আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা হাসমত আলী জানান, হাজিরা খাতা অনুযায়ী আজ (শনিবার) চারজন চিকিত্সক আসেননি। তিনজন চিকিত্সক পারিবারিক অসুবিধা ও স্ত্রীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন। তাই তাঁদের কেউ কেউ আজও আসেননি।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সকদের কারণ দর্শানোর বিষয়টি শুনেছি। বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে বার বার বলার পরও তাঁরা সংশোধিত হচ্ছেন না। এবার শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো তারিখ: ০৫-০৯-২০০৯
Kaydol:
Kayıt Yorumları (Atom)
Hiç yorum yok:
Yorum Gönder